ঢাকা শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
amaderkhobor24.com
নৌকার পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

আনোয়ার হাজীকে নিয়ে বিএনপির তৃণমূলে অসন্তোষ

আমাদের খবর ২৪

প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৫, ০৮:৫৬ পিএম

আনোয়ার হাজীকে নিয়ে বিএনপির তৃণমূলে অসন্তোষ

কেন্দ্রীয় আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বাম থেকে আনোয়ার হোসেন সহ আ.লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন ৪নং বটতৈল ইউনিয়নের খাজানগর এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে নৌকার পক্ষে বক্তব্য রাখেন আনোয়ার হোসেন নামের এক চালকল মালিক। সেসময় ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন পক্ষপাতিত্ব মূলক ভিডিওটি ভাইরাল হলে এ নিয়ে সাধারণ মানুষ জনসম্মুখে তেমন কোন প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্ত করতে পারেনি।

তবে ভোটার শূন্য রাতের ঐ ভোটকে সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ  ও অংশগ্রহণমূলক উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়ায় আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে জনমনে নানা ক্ষোভের জন্ম নেয়। দীর্ঘদিন সেই ক্ষোভ জমিয়ে রাখার পর স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন সাধারণ জনগণ ও বিএনপি’র তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত এই ব্যক্তি পট পরিবর্তনের পর বিএনপি নেতা হিসেবে ক্ষমতা জাহিরের চেষ্টা করায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন বলেছিলেন- “৪ নং বটতৈল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে খুব সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ভোট হয়ে গেছে। ব্যাপক পরিমাণে সাড়া পেয়েছি। সাধারণ জনগণ সবাই আমাদের এখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। আশা করছি, আমাদের এখানে ৮০ শতাংশের উপরে ভোট পুল হবে। বেশিরভাগ ভোট নৌকা পাবে। নৌকা প্রতীক বিজয়ী হবে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বটতৈল ইউনিয়ন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যে সকল নেতাকর্মীরা অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে দল করে গেছেন তাদের অনেকেই আজও অবহেলিত। আর যারা আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে কোটিপতি বনে গেছেন তারাই এখন বিএনপি’র ত্যাগী পরিক্ষিত নেতা কর্মীদের কাতারে গিয়ে জায়গা দখল করে নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন আনোয়ার হোসেন দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। হানিফ-আতা এই খাজানগর এলাকায় আসলে তারাই ছিলেন সর্বেসর্বা। তাদের দাপটে অনেক বিএনপি নেতাকর্মীরা মুখ উঁচিয়ে কথা বলার সাহস পেতেন না। তিনি এখন নিজেকে বিএনপির মানুষ দাবি করছেন। দাবি করলেই তো আর হবেনা, যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তিনি কার লোক। তাছাড়া সারাদিন তাকে লোকজনসহ ভোট কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তাদের পক্ষের কিছু মানুষ ভিডিওটি নিয়েও মিথ্যাচার শুরু করেছে। জোর করে কাউকে দিয়ে ওভাবে ক্যামেরার সামনে কথা বলানো একেবারেই অসম্ভব।

তারা আরো বলেন, তাছাড়া হানিফ-আতার সাথে তার একাধিক ছবি রয়েছে। এ সকল তথ্য প্রমাণ দেখলেই বোঝা যায় তিনি আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি। সত্যের নিচে যতই মিথ্যা লেখা হোক না কেন সত্য সত্যই থাকে। বরং যত মিথ্যা লিখবে তত সত্য উঠে আসবে। আনোয়ার হোসেন কিভাবে আওয়ামী লীগের তাঁবেদারি করেছেন সেটা সাধারণ জনগণ খুব ভালো ভাবেই জানেন। তবে দুঃখের বিষয়, এই আনোয়ার হোসেনের পরিবারেরই সদর উপজেলা বিএনপির এক পদধারী নেতা রয়েছে। তার জোরেই এই পরিবার তাদের ক্ষমতা ধরে রেখেছে। শেখ হাসিনার পতন হলেও তাদের পতন হয়নি। এখন তারা বিএনপির মানুষ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে জনসম্মুখে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। মুখ খুললেই বিপদ। আনোয়ার হোসেন যদি সত্যিই বিএনপির নেতা হতেন তাহলে ১৭ বছরে অন্তত একটি রাজনৈতিক মামলার আসামি হতেন। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের মতো বাড়ি ছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াতেন। কিন্তু তিনি উল্টো বহাল তবিয়তে থেকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে গেছেন। এতে কি প্রমাণিত হয় সেটা আপনারাই ভালো বলতে পারেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীর একাংশ বলেছেন- কিছু মানুষ সর্বদলীয়। যে যখন ক্ষমতায় থাকে তারা তাদের লোক বনে যান। আর এই সব মানুষের পরিবারে একাধিক রাজনৈতিক দলের অনুসারীরা থাকে। যে দলই ক্ষমতায় আসুক তারাই দাপট দেখাবে। এদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই বিপদ। এরা টাকা দিয়ে সন্ত্রাসী পোষে। এদের বিরুদ্ধে কথা বললে বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইনা।

বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা বিএনপির লোক। বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে আমাদের আওয়ামী লীগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির কোন কর্মসূচিতে তার অংশগ্রহণ নিয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। এমনকি আওয়ামী লীগ শাসনামলে তার নামে কোন মামলা হওয়ারও প্রমাণ মেলেনি। তার দাবি- জনসম্মুখে নয়, অন্তরালে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হতো। বাধ্য হয়ে তিনি আওয়ামী লীগের সাথে মিশে ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন।

প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সবসময় চেষ্টা করি এ ধরনের মানুষগুলো যাতে কোনোভাবেই দলে প্রবেশ করতে না পারে। এজন্য আমরা সবসময় সার্চিংয়ের মধ্যেই থাকি। যেগুলো আমাদের সরাসরি নজরে আসে তাদের কোনোভাবেই অন্তর্ভুক্তির সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে সহযোগিতা দূরে থাক কোন ব্যাপারেই সুপারিশ আসার সুযোগ নেই।

Link copied!