ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
amaderkhobor24.com
গাজায় ভয়াবহ পরিস্থিতি

ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে শিশুরা

আমাদের খবর ২৪

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৫, ০৫:০৫ পিএম

ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে শিশুরা

গাজায় ভয়াবহ সময় পার করছে শিশুরা। সেখানে এই শিশুরা তাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত দেখছে মৃত্যু, মৃতপ্রায় এবং মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা মানুষদের। তারা এখন কোনো কিছুতেই অবাক হয় না, কেবল ক্ষুধা তাদের কাবু করে ফেলেছে। 

একেবারে কিছুই হয়তো পাবে না সেটা জেনেও তারা সামান্য রেশনের জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছে। শিশুদের ক্ষুধা, তাদের মৃত্যু, মৃত্যুর পর আলতোভাবে তাদের শরীর, কখনোবা শরীরের কিছু অংশ সাদা কাফনে জড়িয়ে দেওয়া- এই সবই এখন গাজার স্বাভাবিক চিত্র হয়ে গেছে।

যদি মৃত শিশুর নাম জানা থাকে তাহলে কাফনের ওপর তাদের নাম লিখে দেওয়া হয়, অনেকেই থেকে যায় অজ্ঞাত। দীর্ঘ ১৯ মাসের এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

সিওয়ার আশৌর নামের পাঁচ মাস বয়সী একটি মেয়েকে খুঁজছিলেন বিবিসির এক প্রতিবেদক। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে মেয়েটির কান্না তার হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছিল। চলতি মাসের শুরুতে ফুটেজ নেওয়ার জন্য তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।

যদি মৃত শিশুর নাম জানা থাকে তাহলে কাফনের ওপর তাদের নাম লিখে দেওয়া হয়, অনেকেই থেকে যায় অজ্ঞাত। দীর্ঘ ১৯ মাসের এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

সিওয়ার আশৌর নামের পাঁচ মাস বয়সী একটি মেয়েকে খুঁজছিলেন বিবিসির এক প্রতিবেদক। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে মেয়েটির কান্না তার হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছিল। চলতি মাসের শুরুতে ফুটেজ নেওয়ার জন্য তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।

সিওয়ার ছিলো শান্ত। অ্যালার্জির জন্য সাধারণ গুড়ো দুধ সে হজম করতে পারে না । যুদ্ধ এবং ইসরায়েলের অবরোধের কারণে সেখানে শিশুদের প্রয়োজনীয় ফর্মুলার দুধেরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

২৩ বছর বয়সী নাজওয়া বলছিলেন, নাসের হাসপাতালে থাকার সময় তার অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হয়। কয়েকদিন আগে চিকিৎসকরা এক ক্যান গুড়ো দুধ দিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়। এখন তারা বাড়িতে এসেছে কিন্তু তার ওজন আবার কমতে শুরু করেছে।

সিওয়ার মুখের সামনে মাছি উড়ছিল। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন নাজওয়া। তিনি বলেন, ওর দিকে কীটপতঙ্গ উড়ে আসে। আমি স্কার্ফ দিয়ে ওর মুখ ঢেকে রাখি যেন কিছু স্পর্শ করতে না পারে।

নভেম্বরে জন্মের পর থেকেই যুদ্ধের শব্দের মধ্যেই বাস করছে সিওয়ার। গোলাবারুদ, রকেট, বোমা পড়ছে কাছে এবং দূরে। নাজওয়া বলেন, এগুলো সে বুঝতে পারে। ট্যাংক, যুদ্ধবিমান কিংবা রকেটের বিকট শব্দ-এগুলো আমাদের খুব কাছেই ঘটছে। সিওয়ার যখন এসবের শব্দ শোনে সে কান্না করতে শুরু করে। ঘুম থেকে উঠে চমকে যায় আর কান্না করতে শুরু করে।

চিকিৎসকরা বলছেন, অপুষ্টির কারণে কম বয়সী অনেক মায়েরা তাদের শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে পারছে না। এখন বড় সংকট হলো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির।

সিওয়ারের জন্মের সময়ই নাজওয়া অপুষ্টিতে ভুগছিলেন। তিনি ও তার মায়ের জন্য খাবার সংগ্রহ করাই কঠিন হয়ে পড়ছিল। তার মা বলেন যে, সীমান্ত বন্ধ থাকা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় সিওয়ারের জন্য দুধ ও ডায়াপার কেনা যাচ্ছে না।

ইসরায়েলি মিলিটারি সংস্থা কোগাট বলছে, গাজায় কোনো খাদ্য সংকট নেই। তারা বলছে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিশু খাদ্য ও ময়দা সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে পৌঁছেছে। সংস্থাটি বারবার অভিযোগ করছে যে হামাস ত্রাণ চুরি করছে। অন্যদিকে ইসরায়েল সরকার বলছে, হামাস ধ্বংস ও সব জিম্মি মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।

জাতিসংঘ ও ব্রিটেনসহ অনেক দেশের সরকার কোগাটের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও গাজার ক্ষুধার্ত মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, ইসরায়েল যে পরিমাণ সহায়তা নিতে দিচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় এক ‌‘চা চামচের’ মতো।

তিনি বলেন, তেল, আশ্রয়, রান্নার গ্যাস ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ফিলিস্তিনিরা এখন নিষ্ঠুর একটি সংঘাতের নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত ধাপে আছে। জাতিসংঘের মতে, গাজার ৮০ শতাংশ জায়গাই হয় এখন ইসরায়েলের সামরিক জোন বা এমন জায়গা যেখান থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছে।

প্রত্যাখ্যান, উদ্বেগ, নিন্দা এবং নানা টার্নিং পয়েন্ট এসেছে ও গেছে এই যুদ্ধে। কিন্তু সবকিছুর মধ্যে অপরিবর্তিত বাস্তবতা হলো নাজওয়া ও তার কন্যা সিওয়ার মতো গাজার ২১ লাখ মানুষের দুঃখ-কষ্ট। নাজওয়া বলেন, কেউ এখন আর ভবিষ্যৎ বা অতীত নিয়ে ভাবে না।

সবার চিন্তা বর্তমান ঘিরে এবং কীভাবে এখন বেঁচে থাকা যাবে। সেখানে এখন প্রতিনিয়নত ক্ষুধায় কাতর শিশুদের কান্না শোনা যাচ্ছে। একদিকে বোমার আতঙ্ক অন্যটিকে খাবার-পানির সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছে অসহায় ফিলিস্তিনিরা।

Link copied!