ঢাকা মঙ্গলবার, ০৬ মে, ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২
amaderkhobor24.com
কুমেকে সক্রিয় আওয়ামীপন্থী দুর্নীতিবাজরা

বাতিল হওয়া নিয়োগেই ভাইবার প্রস্তুতি

আমাদের খবর ২৪

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম

বাতিল হওয়া নিয়োগেই ভাইবার প্রস্তুতি

কোনভাবেই যেন দুর্নীতির বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছে না কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। অনুমোদনের পর থেকে নির্মাণ, যন্ত্রাংশ ক্রয়সহ সবখানেই নানা অপরাধ, অনিয়ম, দুর্নীতির সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা। ৫ আগষ্টের পর স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও এখন পর্যন্ত তাদের দোসরদের হাতে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ। এবার এই প্রতিষ্ঠানটির উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বাতিল হওয়া নিয়োগেই ভাইবা পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।

সুত্র বলছে, ২০২১ সালে প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডা. মোহা: দেলদার হোসেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে নিয়োগের একটি সার্কুলার প্রকাশ করেন। শুরু থেকেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সর্বশেষ কলেজ সভায় সভাপতি অধ্যক্ষ ডা. দেলদার হোসেন-এর সভাপতিত্বে সভার কার্যবিবরণীতে স্পষ্টভাবে "নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করা হলো" বলে লিপিবদ্ধ করা হয়। অথচ সেই রেজুলেশনটি বর্তমানে গোপন রেখে পুরাতন বাতিল হওয়া সার্কুলারের আওতায় গোপনে ভাইবা পরীক্ষার আয়োজনের অপচেষ্টা চলছে। এটি আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের পুনর্বহালের গভীর ষড়যন্ত্র।

এই ষড়যন্ত্রের অন্যতম কারিগর ছিলেন স্বৈরাচারের দোসর খ্যাত স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির হোতা ডা. মুসতানজিদ। তিনি তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ লোক মো. মশিউর রহমান এবং মো. মাজহারুল ইসলামকে দিয়ে বর্তমান অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খানকে হাত করে ২০২১ সালের বাতিল হওয়া নিয়োগের আওতায় পুনরায় নিয়োগ দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন। 

অন্যদিকে, মো. মশিউর রহমান ও মো. মাজহারুল ইসলাম দুজনই ল্যাব এটেনডেন্ট (আউটসোর্সিং) পদে চাকরি করলেও অধ্যক্ষের প্রভাবের মাধ্যমে অবৈধভাবে কম্পিউটার অপারেটর পদে কাজ করছেন এবং নিয়োগ সংক্রান্ত সব গোপনীয় নথি নিজেদের দখলে রেখেছেন। মো. ইমতিয়াজ আহমেদ (সহযোগী অধ্যাপক, প্যাথলজি বিভাগ) তাদের সহযোগী হয়ে ভল্ট রুম খুলে ফাইলপত্র সরানো, ঘাঁটাঘাঁটি করা এবং নিয়োগ সংক্রান্ত নথি গোপনে ম্যানেজ করে যাচ্ছে। এ কাজে মো. জামান আহমেদ (উচ্চমান সহকারী)-ও সক্রিয়ভাবে জড়িত।

২০২১ সালের রিটেন পরীক্ষার সময় পপি খাতুন (লাইব্রেরিয়ান), মো. মশিউর রহমান ও মো. মাজহারুল ইসলামকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করতে সহযোগিতায় ছিলেন কলেজের কর্মরত শিক্ষক আফসানা জান্নাত (প্রভাষক, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ), মো. নাহিদুল ইসলাম (সহযোগী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি) সহ আরও অনেকে। অভিযোগ আছে, এই প্রক্রিয়ায় টাকাও লেনদেন হয়েছে। সেইসঙ্গে পপি খাতুন তার চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য মো. জামান আহমেদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে নিয়োগ বানিজ্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।অফিস টাইম শেষে পপি খাতুন প্রধান সহকারী জামান আহমেদের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে থাকেন। তাছাড়া জামান আহমেদের বেডরুমেও পপি খাতুনকে যাওয়া- আসা করেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। ইতিপূর্বে যারা এই ব্যাপারে কথা বলেছেন তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

বর্তমান অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান রাজশাহী মহানগর সাচিবের সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের দোসর। তিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলের অনিয়ম-দুর্নীতির দাগ এখনো বহন করছেন। কলেজের দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে তিনি রাজশাহীতে ব্যক্তিগত ক্লিনিকে রোগী দেখেন। আর এই সুযোগে আওয়ামীপন্থী এই দুর্নীতিবাজ চক্র কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নিজেদের মতো করে চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডা. মোহা. দেলদার হোসেন ও  ডা: মো. মুসতানজিদ গোপনে মো. মশিউর রহমান, মো. মাজহারুল ইসলাম ও পপি খাতুনকে নিয়োগ দেয়ার জন্য সহায়তা করে চলেছেন। সেই বাতিল হওয়া নিয়োগ পুনরায় পাস করানোর জন্য নেপথ্যে ভূমিকা রাখছেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে কর্মরত প্রধান সহকারী মো. জামান আহমেদ, ডাঃ সিরাজুম মুনির (কার্ডিওলজি  বিভাগ), ডা: মো. খসরুজ্জামান ( গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি) ও ডা: মো. শহিদুল ইসলাম ( নিউরোলজি বিভাগ)।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই আওয়ামী লীগ পন্থী দুর্নীতিবাজদের পুনর্বহাল এবং অনিয়মের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে এবং মো. মশিউর রহমান, মো. মাজহারুল ইসলাম ও পপি খাতুনের অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তদন্তের আওতায় আনা হোক। সেই সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ করা হোক। 

বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মোহা: দেলদার হোসেনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

প্রসঙ্গে বর্তমান অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান জানান, ২০২১ সালে যখন নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছিল সেসময় অন্যজন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ঐ পরীক্ষায় অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে অনলাইনে কেউ একজন অভিযোগ করেছিলেন। এরপর নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত হয়েছে। তবে তদন্ত রিপোর্ট আমাদের দেওয়া হয়নি। আমাদের একটি চিঠি দিয়ে স্থগিত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়েছে এবং পুনরায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে বেশ কয়েকটি দপ্তরের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে। কমিটির সকলে মিলে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।

Link copied!