প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৫, ০৬:৪৩ পিএম
কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলকারীদেরকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি আব্দুল মান্নানকে গ্রেপ্তারের একদিন পর জামিন দিয়েছে আদালত। ছুটির দিনে জামিনের প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ছাত্রজনতা। রোববার (২৭ এপ্রিল) কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে তার জামিন বাতিল ও জামিনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের শাস্তির দাবি করেন তারা।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। পরদিন শনিবার কুষ্টিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গোপাল চন্দ্র সরকার আব্দুল মান্নানকে জামিন দেন। এ ঘটনা শহরে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন ছাত্র-জনতা। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সামনে বিক্ষোভে ছাত্র-জনতা, বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন কর্মসূচি পরিচালনা করেন কুষ্টিয়া জেলা যুবদলের সদ্য সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য আল আমিন রানা (কানাই)।
বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল মুঈদ বাবুল, আব্দুল মাজেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আব্দুল হাকিম মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ জাকারিয়া উৎপল, জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম সুমন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, দলের দপ্তর সম্পাদক শাহারিয়া ইমন রুবেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ, শহর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইমতিয়াজ দিবস, সাবেক ছাত্রনেতা নাহিদুল ইসলাম রুপল প্রমূখ।
এসময় বক্তারা বলেন, আঃলীগের দোসররা এখনো থানা ও আদালত বহাল তবিয়তে আছে। আঃলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে আদালত থেকে ছাত্রজনতার উপর হামলাকারীরা দাঁড়ানো মাত্রয় জামিন হয়ে যাচ্ছে।
গত শনিবার সরকারি ছুটির দিন বদলি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোপাল চন্দ্র সরকারের আদালত আওয়ামী দোসর আব্দুল মান্নান কে জামিন দেন। এরআগে শুক্রবার ছাত্রজনতার উপর হামলার একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করে মডেল থানা পুলিশ। মামলা নং-৩১, তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ইং। মামলার বাদী ইয়ামিন আলী। আব্দুল মান্নান এই মামলার ৫৭ নং এজাহারনামীয় আসামি। মান্নানকে জামিন দাতা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোপাল চন্দ্র সরকারের অপসারণ এবং মান্নানের জামিন বাতিলের দাবি জানান। এছাড়াও ৪ আগষ্ট ছাত্রজনতার উপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ছাত্রজনতার উপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭৫ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরমধ্যে মাত্র ৩৩ জন জেলহাজতে রয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যা চেষ্টা মামলায় এজাহারভুক্ত ৫৭ নম্বর আসামি কুষ্টিয়া পৌরসভার সদ্য সাবেক সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নান (৪৫)। কুষ্টিয়া পৌর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়াদি ফকিরপাড়া এলাকার মৃত আনোয়ার প্রামাণিকের ছেলে।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করতে মাঠে সক্রিয় ছিল মান্নান। ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তিনি আত্মগোপনে চলে যান। কিছুদিন পলাতক থাকার পর পুনরায় কুষ্টিয়া পৌরসভার দাপ্তরিক কাজে যোগ দেন তিনি। সম্প্রতি লাঠি হাতে নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জোড়ালো হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে মান্নান গত ১৬ এপ্রিল পৌরসভা থেকে বের হন। এরপরে আর অফিসে যাননি। তার বিরুদ্ধে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভায় সার্ভেয়ার পদে নিয়োগ নেওয়াসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর হামলা ও গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটে৷ এতে আহত ইয়ামিন আলী বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ৬৭ জনের নামোল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খন্দকার সিরাজুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া আদালত পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আন্দোলকারীদের হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি আব্দুল মান্নানকে জামিন দেয়ার প্রতিবাদে আদালত চত্বরে মানববন্ধন করেছেন ছাত্রজনতা।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলকারী ওপর হামলা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ইয়ামিন আলী নামে এক যুবক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মান্নানকে শুক্রবার বিকালে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। শনিবার আদালত তাকে জামিন দেন।
আপনার মতামত লিখুন :