প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৫, ০৯:১৪ পিএম
হাজী এনামুল হকের ফাইল ছবি
মুনাফালোভী ডিলার হাজী এনামুল হকের কারসাজিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে সার কিনতে হয় বলে অভিযোগ করেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের কৃষকরা। অধিক লাভের আশায় অভিযুক্ত ডিলার সরাসরি কৃষকদের কাছে সার বিক্রি না করে দোকানদারের কাছে বিক্রি করেন। এসব দোকানদাররা সরকার নির্ধারিত মূল্য উপেক্ষা করে সারের ধরণ অনুযায়ী বস্তা প্রতি ২০০-৩০০ টাকা বেশি মূল্যে বিক্রি করেন বলে জানা যায়। এদিকে ডিলারের কাছে গিয়ে সার না পেয়ে বাধ্য হয়ে দোকানদারদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে কিনতে হয় বলে ওই এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করেন। এছাড়াও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নীতিমালা উপেক্ষা করে চিথলিয়া ইউনিয়নের সার ডিলারশিপ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে অভিযুক্ত ডিলারের বিরুদ্ধে।
কৃষকরা জানান, "চিথলিয়া ইউনিয়নের সার ডিলার মিরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা হাজী এনামুল হক। তার এই সার ডিলারের কার্যক্রম পরিচালনা করেন ম্যানেজার মুজিবর রহমান। ডিলার প্রভাবশালী হওয়ায় কৃষকদের উপেক্ষা করে উচ্চমূল্যে দোকানদারদের কাছে সার বিক্রি করে দেন। দোকানদাররা এই সুযোগ নিয়ে কৃষকদের কাছে সারের ধরণ অনুযায়ী ২০০-৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেন। কখনো কখনো এসব দোকানদাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও সারের দাম বেশি নেন। এতে ভোগান্তি ও ফসল উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়।"
কৃষকরা আরও জানান, "সরকার কর্তৃক নির্ধারিত প্রতি বস্তা সারের খুচরা বিক্রয় মূল্য ইউরিয়া ১৩৫০ টাকা,টিএসপি ১৩৫০ টাকা,এমওপি ১০০০ টাকা,ডিএপি ১০৫০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে তা পাওয়া যায় না। প্রতি বস্তা সারে ২০০-৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়।"
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র প্রতিবেদনকে জানায়, "হাজী এনামুল হক মিরপুর পৌরসভার বাসিন্দা, পৌরসভার মেয়র ও প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা। তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের মাধ্যমে চিথলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা না হয়েও সেখানকার সার ডিলার হয়েছেন। এটা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নীতিমালা বর্হিভূত। সার ডিলার হতে হলে স্থানীয় বাসিন্দা অগ্রাধিকার পাবে। কিন্তু অভিযুক্তের ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে স্থানীয়রা কেউ সারের ডিলারশিপ নেওয়ার সাহস পাননি।"
অভিযুক্ত সার ডিলার হাজী এনামুল হকের ম্যানেজার মুজিবর রহমান প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান," উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরাদ্দ অনুযায়ী যথাযথ পরিমাণ সার তারা পেয়ে থাকেন। তবে বেশিরভাগ সারই দোকানদারদের কাছে বিক্রি করে দেন। দোকানদারদের কাছে সার বিক্রির কারণ হিসাবে তিনি জানান, কৃষকরা দোকান থেকে বাঁকিতে সার কেনেন। কিন্তু ডিলার থেকে সার বাঁকিতে দেওয়া হয় না।"
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান," হাজী এনামুল হক ২০০৯ সালের আগের নীতিমালা অনুযায়ী চিথলিয়া ইউনিয়নের সার ডিলার হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন। ২০০৯ সালের পর স্থানীয় ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার হিসাবে ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। তবে ডিলারের কাছ থেকে কৃষকদের সার না পাওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন এবং কেউ কখনো অভিযোগ করেনি বলে জানান।"
আপনার মতামত লিখুন :