প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ০৫:৪৩ পিএম
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব
দেশের অন্যতম শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, অনিয়ম, দুর্নীতি, মিথ্যাচার সহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের এম এ রাজ্জাক মিলনায়তনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম (বিপ্লব) এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, `আমি বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছি। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারী ভোটের দিন পর্যন্ত ৯টি মামলাসহ ১৫টি মামলা মাথায় নিয়েও কুষ্টিয়ায় আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। দলকে সংগঠিত করতে আমি নিরলস কাজ করে চলেছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা থাকায় আমি কোন টেন্ডারবাজির সাথে জড়িত নয়। আমি একজন প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। জীবিকার প্রয়োজনে ত্রুটি ও ঝামেলামুক্ত কাজগুলোতে অংশ নিয়ে থাকি। অথচ আমাকে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার ব্যবসায়ীক পার্টনার ও আওয়ামীলীগের দোসর চাল ব্যবসায়ী রশিদ ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করছে।
তিনি বলেন, গত ৯ এপ্রিল দুপুরে কুষ্টিয়ায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর চেক জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলার আসামি বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি চাল ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদের কুষ্টিয়া শহরের গোশালা রোডের বাড়িতে কে বা কারা গুলিবর্ষণ করেন। এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করে আওয়ামীলীগের ওই দোসর সাংবাদিকদের কাছে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করেন। ওই দিন তিনি সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দেন, আইলচারা পশু হাটের টেন্ডারকে কেন্দ্র করে তার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। অথচ আমি কিংবা মুন্না কেউ ওই হাটের দরপত্র ক্রয় করিনি। যেখানে আমরা দরপত্রে অংশ নেয়নি, সেখানে আমাদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়, বলে আমি মনে করি।
বাড়িতে গুলির ঘটনায় আব্দুর রশিদ তাৎক্ষনিক সাংবাদিকদের বলেন, আইলচারা পশুহাটের ইজারা পাওয়াকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম (বিপ্লব) ও ব্যবসায়ী মুন্না চরমপন্থী সংগঠনের নেতাদের দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। সেই বক্তব্যকে কোট করে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন মিডিয়া ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। আব্দুর রশিদ প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদে সাংবাদিকদের আরও বলেন, তিনি ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে চাল ব্যবসার পাশাপাশি হাটবাজার ইজারা নেওয়ার ঠিকাদারি করেন। কয়েক দিন আগে সদর উপজেলার আইলচারা পশুহাটের ইজারা পেয়েছেন তার ভাতিজা জিহাদুজ্জামান। ওই হাটের দরপত্র কেনার পর থেকে চরমপন্থী সংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে দরপত্র জমা না দিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। কয়েক দিন আগে প্রায় ১ কোটি ৬২ লাখ টাকায় হাটের ইজারা পান তার ভাতিজা জিহাদুজ্জামান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই চরমপন্থী নেতা পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, আইলচারা হাটের ইজারা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। না হলে মেরে ফেলার হুমকি দেন ওই চরমপন্থী। আইলচারা পশুহাটের টেন্ডারে অংশ না নিতে চরমপন্থীরা আমাকেও হুমকি দিয়েছিল। এ জন্য আমি টেন্ডারে অংশ নেয়নি, তাহলে এখন কেন আমার নাম আসছে?` এলাকায় রশিদদের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। এ জন্য আমাকে রাজনীতিকভাবে হেয় করতে একটি ভিন্ন ইস্যুকে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে তিনি রাজনৈতিক ফয়দা লুটতে চেষ্টা করছে।
লিখিত বক্তব্যে জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব আরও বলেন, `আবদুর রশিদ ও তার পরিবার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর। তার বড় ভাই সিদ্দিকুর রহমান বিএনপি ছেড়ে মাহবুবউল আলম হানিফের হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পরবর্তীতে সদর উপজেলার আইলচারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। বর্তমানে তিনি সদর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তারা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হানিফের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও হাটঘাট ইজারা নিয়ে পরিচালনা করেছেন। আব্দুর রশিদ নিজেও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি হওয়ার পর তার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে আইলচারা পশুহাট, নান্দিয়ার বিল, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। তার ব্যবসায়িক পার্টনার ছিল হানিফ ও তার চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা। আওয়ামীলীগের দোসর এই চাল রশিদ কুষ্টিয়ার বৃহত্তম চালের মোকাম থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে হানিফ ও আতার কাছে দিয়েছেন। এই আব্দুর রশিদ সরকারি চাল সংগ্রহের কমিশনের টাকা দিয়ে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের পার্টি অফিস নির্মাণ করে দেন। ওই সময় কুষ্টিয়ার চালকল মালিকদের কাছ থেকে প্রতি কেজিতে ৩টাকা করে উৎকোচ নিয়ে প্রায় চার কোটি টাকা হানিফের হাতে বুঝে দিয়েছিলেন আব্দুর রশিদ।
২০২২ সালে আব্দুর রশিদ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আইলচারা বাজারে অবস্থিত ভিআইপি অটো রাইচ মিল ও ভিআইপি অটো ফ্লাওয়ার মিল দুইটি প্রায় একশ কোটি টাকার সম্পদ মাত্র ১৩ কোটি টাকায় গোপনে ব্র্যাক ব্যাংকের কাছ থেকে নিয়ে নেই। এ ব্যাপারে মহামান্য হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় হানিফ ও তার ভাই আতার ক্ষমতা দেখিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মিল দুইটি দখল করে নেন রশিদ। এঘটনায় দেশের সকল মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এঘটনায় আমি ও আমার মামাতো ভাই মুন্না ভিআইপি অটো রাইচ মিলের পক্ষে হাইকোর্টে মামলা পরিচালনা ও তদারকি করি। এ কারণে আমার ও আমার মামাতো ভাই মুন্নার উপর রশিদের প্রচন্ড রাগ ও ক্ষোভ ছিল। ওই সময় তিনি (রশিদ) বলেছিলেন আমাদের দেখে নেবেন। গত ৯ এপ্রিল উনি সাংবাদিক ও প্রশাসনের সামনে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, ২০০৪ সালে বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই রশিদের খাজানগরের হাসকিং মিলে পালিয়ে থাকা অবস্থায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হেলিকাপ্টারযোগে দেশের সর্ব বৃহত অভিযান পরিচালিত করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে প্রশাসনের অভিযানের খবরে আগেই শীর্ষ সন্ত্রাসী সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন আব্দুর রশিদ। এছাড়া ঋণখেলাপি ও জালিয়াতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের করা মামলা চলমান রয়েছে। গত বছরের ১৬ নভেম্বর প্রতারণা মামলায় কুষ্টিয়া শহর থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। অনেক ব্যবসায়ী তার জন্য নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে। বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা এবং সারা দেশের সাধারণ ধান ব্যবসায়ীদের প্রায় দুইশত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি আব্দুর রশিদের বাড়িতে গুলির ঘটনায় প্রশাসন একজনকে আটক করেছে। আপনারা পেশাগত দায়িত্বের জায়গা থেকে খোঁজ খবর নিলে আসল ঘটনা জানতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। আপনারা আব্দুর রশিদের বক্তব্য সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করেন। ওই টেন্ডারের তথ্য সংগ্রহ করলেই আপনারা সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন। আব্দুর রশিদ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তার বাড়িতে গুলির ঘটনায় আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। উক্ত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তদন্ত করে আসল ঘটনা তুলে ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চাল ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
আপনার মতামত লিখুন :